নির্বাচনে যে বন্ধুত্ব অবাঞ্ছিত

23,November 2017, Thursday, 18:59


মিনা ফারাহ

বন্ধু : বিপদেই বন্ধুর পরিচয় কিন্তু সামাজিক বন্ধুত্ব থেকে রাষ্ট্র আলাদা। বিপদে একমাত্র প্রতিবেশীরাই স্বার্থহীনভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রই তা করবে না। যেমন- সিরিয়া শেষ না হতেই যারা ইয়েমেন লণ্ডভণ্ড করছে, প্রত্যেকেই কোনো না কোনো জোটের বন্ধু। দিল্লির বন্ধুদের মধ্যে বাংলাদেশ নাকি এক নম্বরে। অথচ এরাই তিস্তার পানি আটকে রেখেছে। জনমতের বিরুদ্ধে গিয়ে একটি পছন্দের দলের সাথে রামপাল বানাতে গিয়ে সুন্দরবনসহ চিত্রা হরিণ থেকে চিতা বাঘ- প্রকৃতির বিরল সম্পদগুলোকে ডাইনোসরের মতো বিলুপ্তির ব্যবস্থা করেছে। বাংলাদেশে মিডিয়ার বাজার খুলে নিজের দেশে আমাদের টেলিভিশন আজ অবধি ঢুকতে দিলো না। অসম, অবাস্তব এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব হয় না। বন্ধুত্বের সংজ্ঞা কী? এ জন্যই কলকাতার আনন্দবাজার বলেছে, ‘৯০ ভাগ বাংলাদেশীরই ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট।’
নির্বাচন : সুজাতা মহাকাব্য শেষ, লিখব মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা। খালেদা কেন বলেছিলেন, ‘সাপকে বিশ্বাস করা যায় কিন্তু ওমুককে নয়!’ ক্ষমতাসীনদের খুঁটির জোর বোঝার সাধ্য দুর্ভাগা জাতির নেই। ২০০৭ সালেই টার্গেট- একটি বিশেষ দলকে ক্ষমতায় রাখতে, যুদ্ধাপরাধী এবং সন্ত্রাস বিতর্ক সামনে এনে, আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। এই কাজে সবার আগে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী মনোজগৎকে ধ্বংস করা হয়েছে। ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মতো ঝগড়া বাধিয়ে রাখা হয়েছে যেন বিনা বাধায় যা খুশি করা যায়। জোটের গুরুত্বপূর্ণ শরিক দলটিকে মূল দল থেকে বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে দেশবিরোধী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো শক্তিকে দুর্বল করার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এ কারণেই ৫ জানুয়ারির লজ্জাকর অঘটন সম্ভব হয়েছে। এরা এরশাদেরও স্রষ্টা, যাকে দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের সর্বনাশ করা হলো।
অতীতে কখনোই এই কাদা ছোড়াছুড়ি দেখিনি। বরং ’৯০-পরবর্তী শিশু গণতন্ত্রে ভুলভ্রান্তি থাকলেও দেশের প্রতিটি দলের মধ্যেই স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল। ছিল না ঘোষক কিংবা মীমাংসিত যুদ্ধাপরাধ ঝগড়া। প্রমাণ, ’৯০-এর আন্দোলন থেকে ২০০৮-এর নির্বাচন পর্যন্ত কখনো সংসদে, কখনো বিরোধী দলে। ‘জোট সরকারের বহুদলীয় গণতন্ত্রকে স্বীকার করেই, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে আবারো ক্ষমতার মুখ দেখল ’৭৫-এর বিলুপ্ত আওয়ামী লীগ।’ এই দফায় একটি বিশেষ দলের নেতাকে জোরজবরদস্তি জেলে নিয়ে কী ধরনের দেনদরবার চালাচ্ছে, সময়ই বলবে। এ জন্য দায়ী একা আওয়ামী লীগ নয়। বন্ধুরাই ’৭০-এর আওয়ামী লীগকে বানাল, বর্তমানের ধন্যবাদ, পুরস্কার এবং অভ্যর্থনায় সীমাবদ্ধ, মেয়াদোত্তীর্ণ পরজীবী দল।
৫ জানুয়ারি যা করা হলো, তা একটি মারাত্মক অপরাধ এবং বিচার সাপেক্ষে নানান ধরনের শাস্তিই কাম্য। প্রমাণ, ষোড়শ সংশোধনীর রায়, যে সত্য উচ্চারণের জন্য চরম মূল্য দিলেন সিনহা। একটি উদাহরণেই এর প্রমাণ। ২১ অক্টোবর ২০১৩ ভারতের দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গ- ‘হাসিনাকে ফেরানোর জন্য বাংলাদেশ নির্বাচনে দিল্লি খরচ করবে ১০০০ কোটি রুপি।’ শত্রু খোঁজার প্রয়োজন শেষ।
বিশেষ ব্যক্তিকে আবারো ক্ষমতায় আনতে, খালেদার হাত-পা বেঁধে সাঁতার প্রতিযোগিতায় নামানোর কূটনৈতিক চক্রান্ত চলছে। সুষমাদের বডিল্যাঙ্গুয়েজ, কথোপকথন এবং ব্যক্তির সঙ্গে পারিবারিক আচরণে, রাষ্ট্র নেই। অগণতান্ত্রিক সরকারকে টিকিয়ে রাখতেই ইভিএমের অপকৌশল। উদ্দেশ্য, তথ্যপ্রযুক্তির তেলেসমাতি খাটিয়ে ভোটের বাক্সে ডিজিটাল হ্যাক।
ফ্লিপফ্লপ রাজনীতি : যে প্রশ্নের উত্তর একদিন দিতেই হবে। সংবিধান সংশোধন করে যাদেরকে যুদ্ধাপরাধী বানালো, ৫ জানুয়ারির আগ পর্যন্ত এদের সঙ্গে একটি নির্বাচনও বয়কট করা হয়নি। সাকা চৌধুরীরা তখনো সংসদে। কিন্তু সেই সংসদ বর্জন না করায়, জুডিশিয়াল মার্ডারের অভিযোগ ওঠাই স্বাভাবিক? ইতিহাস বলে, ধর্মভিত্তিক দেশবিভাগের আন্দোলনের বন্ধুরা ৭১-এর বিরোধিতায় বন্দী হলে, শাহ আজিজুর রহমান কিংবা ফকা চৌধুরীর মতো অনেকেরই দেখভাল করতেন শীর্ষ নেতা। অতীতে বহুদলীয় গণতন্ত্রের অংশীদারদের সঙ্গে কখনো সরকারে, কখনো বিরোধী দলে থাকার আগে, এই কথা মনে থাকা উচিত ছিল হাইকমান্ডের। ‘২০১০ সালে বিপক্ষের শক্তি হলে, এর আগে কোন বিচারে পক্ষের শক্তি হয়?’ দায়ী একা আওয়ামী শীর্ষস্থানীয়রা নয়। সম্মুখ সমরে শীর্ষস্থানীয়দের অনুপস্থিতির ফলে, মুক্তিযুদ্ধের অভিজ্ঞতার অভাবে- উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে পাবলিক ক্ষেপিয়ে তোলা?
এর নাম ‘ফ্লিপফ্লপ’। দণ্ডিতরা ২০০১ থেকে ২০০৮ সংসদ পর্যন্ত ‘শতভাগ নির্দোষ’। তবে ১৫তম সংশোধনীর আগে বা পরে, এমন ভুল কোনো রাষ্ট্রনায়কই করবেন না, যে কারণে বিচার নিয়ে অভিযোগ কেউ আনতে পারে। জবাবদিহিতা থেকে মুক্তি নেই বলেই আবারো গণজোয়ারে ভাসছে দেশ।
সন্ত্রাসের রাজনীতি : সন্ত্রাস কেউই চায় না। সন্ত্রাস কী- ইরাকি, আফগান, পাকিস্তানিরা জানে। এখানেও ‘বাংলাভাই’ এবং ‘জনতার মঞ্চে’র পর সরাসরি সন্ত্রাস বলতে ‘হোলে আর্টিজান’। এর বাইরে যা শ্রুতিমধুর নাম দিয়ে বাড়ি ঘেরাও করে অভিযান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের বিরুদ্ধে দারুণ বিতর্ক। জনতার মঞ্চের পরিণামে সন্ত্রাসের প্রমাণ, ২৮ অক্টোবরে জ্যান্ত মানুষ প্রকাশ্যে পিটিয়ে মারার উৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় ৯২ দিনের আন্দোলনের সুযোগে যারা আগুনসন্ত্রাস করল, বিএনপির কি উচিত নয় সরব হওয়া? ২৬ অক্টোবর হাইকমান্ডের নিজ মুখে লগি-বৈঠা নিয়ে রাস্তায় সন্ত্রাস করার হুকুমের ক্লিপ ইন্টারনেটে। ৯২ দিনের আগুনসন্ত্রাসের মূলেও ওরাই।
জিরো টলারেন্সের নামে যাদের ক্রসফায়ারে দেয়া হচ্ছে, সাদা পোশাকে তুলে নিচ্ছে, তারা বিএনপি জোটের একাংশ। বাড়ি ঘেরাওয়ের অভিযান শেষে যাদের ওপর দোষ চাপাচ্ছে, একই গোত্রের কর্মী। এভাবে বিরোধী দল নিধন অভিযান, একা ক্ষমতাসীনদের বুদ্ধিতে নয়। তারেককে সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে স্বদেশ রায়ের কলামে বন্ধুদেরকে যে ভাষায় টেনে আনা হলো, দিল্লিতে তারেকবিরোধী কারসাজির এক প্রমাণ। সুতরাং জিরো টলারেন্সের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা এটাই- ‘ব্রিটিশের ডিভাইড অ্যান্ড রুল থিওরি।’
পশ্চিমারা সন্ত্রাসের নাম শুনলে কাঁপে। ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে জিরো টলারেন্সের চেয়ে ভালো পন্থা নেই। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, রাজনীতিতে একমাত্র ক্ষমতাসীনরা ছাড়া বাকিরা সন্ত্রাসী এবং সন্ত্রাস না চাইলে হাইকমান্ডকেই বারবার ক্ষমতায় রাখতে হবে। ফলে জিরো টলারেন্স নিয়ে এক ব্যক্তির ওপর অতি আস্থায়, ৯ বছরে আমাদের রাজনৈতিক কম্বলের লোম উদ্বেগজনকহারে উধাও। দল বলতে এখন একটি মাত্র ঢাক, বাকি সব ফুটা। বন্ধুদের কারণেই ঘরে-বাইরে ভিডিও কনফারেন্সে দেশ চালানো হয়। দেশটাকে বন্ধুরা কোন নরকে নিলো!
অসম বাণিজ্য : আমেরিকা-ব্রিটেন যে ধরনের ঘাটতি হজম করতে সক্ষম, বাংলাদেশে কি সম্ভব? ভারতীয় পণ্যের আইটেমের তুলনায়, আমাদের সংখ্যার রক্তহীনতা নিয়ে খোদ বিকেএমইএ-এরই অভিযোগ। বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্য ঘাটতির বিরুদ্ধে ট্রাম্পের দাবি, আমেরিকাকে আর চুষে খেতে দেয়া হবে না।’ বাংলাদেশীদের অধিকাংশই ট্রাম্পবিরোধী কিন্তু ভারতের সাথে ভয়ানক বাণিজ্য ঘাটতির ব্যাখ্যা কী? ওরা পেঁয়াজ না পাঠালে দ্রব্যমূল্যের ভূমিকম্প শুরু হয়ে যায়।
উন্নয়নের গুজব আকাশ ছুঁয়েছে। ক্ষমতাসীনদের মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে? ১০ নভেম্বরের প্রায় সব পত্রিকার খবর, ২০৩০ সালে বাংলাদেশ নাকি অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যাবে। বাস্তবে প্রতিটি ম্যানহোলের মুখে ঢাকনা দিতে পারলেই যারপরনাই উন্নতি বলে স্বীকার করব। এ দিকে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে আম-ছালা দুটোই গেছে।
অসম বাণিজ্যের দৃষ্টান্ত। ২০১৪-১৫ সালে ভারত রফতানি করেছে ৬.৫ বিলিয়ন এবং বাংলাদেশ রফতানি করেছে মাত্র ৫২৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য! ২০০০ সালে বাণিজ্য ঘাটতি ৭৭৪ মিলিয়ন ডলার, ২০০৫-এ ১৯৩৩ মিলিয়ন ডলার, ২০১০ সালে ২৯১০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশ থেকে ভারতের আমদানি ০.২ শতাংশ এবং ভারত থেকে আমদানি ১৩.২ শতাংশ (ডেইলি স্টার, আগস্ট ২০১১)।
২০১৩ সালে পুতিনের সঙ্গে ঋণের টাকায় এক বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র ক্রয়ের হ্যান্ডশেক। ভারতের দুই বিলিয়ন ডলার ঋণের ঘোষণার পরেই চীনের তড়িঘড়ি ২৪ বিলিয়ন দেয়ার ঘোষণার সাথে সাথে দিল্লির আরো সাড়ে চার বিলিয়নের ঘোষণা। রোহিঙ্গা ক্রাইসিসের তোয়াক্কা না করেই, সাড়ে চার বিলিয়ন ডলারের ঋণের চুক্তি সই? বিষয়টি এইরকম, কার আগে কে লুটেপুটে খাবে। ২০১৭ সালে ভারত সফরে ১০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ এবং পাঁচ বিলিয়ন ডলারের ঋণ ঘোষণায়, শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে রয়টার, ‘৫০০ মিলিয়ন ব্যয় হবে মিলিটারি ইকুইপমেন্ট ক্রয়ে।’ সর্বশেষ বাণিজ্য ঘাটতির নম্বর কেউ কি জানে? কথিত উন্নতির অর্থনীতি কি শুধুই মুখের কথা?
এ দিকে তুরস্কের সাথে লাভজনক বাণিজ্য সত্ত্বেও যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থনের দায়ে কথায় কথায় তুরস্ককে গালিগালাজ করা হয়। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ রফতানি করেছে ৬৩ কোটি ১৬ লাখ ডলারের পণ্য, তুরস্ক থেকে আমদানি করেছে ২১ কোটি ২৩ লাখ ডলারের পণ্য। অর্থাৎ নিট মুনাফা ৪১ কোটি ৯৩ লাখ ডলার।
সাউথ এশিয়ান মনিটর লিখেছে- ব্রহ্মহ্মপুত্র নদীপথে সামরিক সরঞ্জাম পরিবহনের কথা ভাবছে ভারত। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, সেনাবাহিনী এবং ইনল্যান্ড ওয়াটার ওয়েজ অথরিটিজ অব ইন্ডিয়া, যৌথভাবে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) ডিবরুগড়ের বগিব্রিজ ঘাট থেকে জরিপ অভিযান শুরু হয়েছে। এই জরিপের লক্ষ্য, নদীর ৮৯১ কিলোমিটার দিয়ে বড় আকারের বাণিজ্যিক এবং সামরিক পরিবহন।
রূপপুর এবং রামপাল : ঝুঁকিপূর্ণ বলেই ‘দায়মুক্তি’র মুচলেকা। এই অপশক্তির বিরুদ্ধে যাদের অবস্থান নেয়ার কথা, ৭০-এর সেই আওয়ামী লীগই, ভোটের বদলে ৫ জানুয়ারির আশ্রয় নিয়েছে। প্রকল্পগুলো নিয়ে যা বলছে, ৯৯ ভাগই অসত্য। জনতন্ত্র এবং গণতন্ত্র থেকে ক্ষমতাসীনদের বিচ্ছিন্ন না করলে, রামপালের মতো প্রকল্প অসম্ভব। ভারতে গণতন্ত্র আছে বলেই নিজেদের সুন্দরবনের অংশে কয়লা-বিদ্যুতের অনুমতি দেয়নি আদালত এবং আমজনতা। যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে ঝগড়া বাধিয়ে না রাখলে, উল্টা তোফায়েলরাই তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির প্রথম সারিতে থাকতেন।
নিউক্লিয়ার এশিয়ার খবর : ভারতের দেয়া সাড়ে চার বিলিয়ন ডলার ঋণের এক বিলিয়ন ব্যয় হবে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে। নিউক্লিয়ার সায়েন্সে বাংলাদেশের তেমন পারদর্শিতা না থাকা সত্ত্বেও দায়মুক্তির মুচলেকা নিয়েই প্রকল্পের সমালোচনা কেউ করে না। নির্মাতারা ঝুঁকির দায় নেবে না, যেমন নেয়নি ভুপালে। প্রতিটি নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টই একেকটি পারমাণবিক বোমার সমান। এ জন্য দরকার সব ধরনের প্রস্তুতি। আমাদের নেই ন্যূনতম স্টাফ, শিক্ষক, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, জনসচেতনতা, উদ্ধার ব্যবস্থা। যে কোম্পানি প্রজেক্ট তৈরি করছে, রসাটোমের তৃতীয় শ্রেণীর নিউক্লিয়ার প্ল্যান্টের বিরুদ্ধে খোদ ভারতীয়দেরই অভিযোগ। অথচ পারমাণবিক বর্জ্যরে এক বিলিয়ন ডলারের ঠিকাদারিও নিলো সেই ভারত?
সীমান্ত হত্যা : লাশ না আসা পর্যন্ত অনেক ধর্মের দেবতার ভোগ হয় না। হামেশাই নরবলির প্রমাণ উদ্ধার করছেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। সীমান্ত হত্যার বিষয়টিও তাই। ডজনখানেক লাশ না ফেললে যেন পেটের ভাত হজম হয় না দিল্লির। একমাত্র বাংলাদেশ ছাড়া ভারতের অন্য কোনো সীমান্তে গুলি চালালে কী হয়, দিল্লি জানে। কথায় কথায় একটি দেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে প্রতিবাদ এবং অপমান করা হলেও ব্যতিক্রম বন্ধুরাষ্ট্রটি! এমন কি, ভারতের প্রতিটি ওয়েবসাইটে মুক্তিযুদ্ধকে চতুর্থ ইন্দো-পাক যুদ্ধ বলে অপমানের পরেও প্রতিবাদহীন। কার কাছে এত অসহায় পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়?
ফেলানী হত্যা ওরা করে এবং খুনির পক্ষেই রায় দেয়, এরপরেও কী শত্রু খুঁজতে হবে? যত দিন উদ্দেশ্য হাসিল হবে, সীমান্ত হত্যাসহ প্রতিটি অন্যায়ই মেনে নিতে বাধ্য ক্ষমতাসীনরা।
টেলিভিশন : মিডিয়ায় বন্ধুরাষ্ট্রটির প্রভাব এত বেশি যে, ‘পাখি’ পোশাকের জন্য একাধিক আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। ছোটদের মুখে হিন্দি; স্টার জলসা না দেখতে পেরে স্বামী খুন; উত্তেজক সিরিয়ালগুলোর কারণে দাম্পত্য কলহ তুঙ্গে ইত্যাদি। ক্ষমতাসীনরা জানলেও, ‘ক্যাবল সুইচে’ হাত দেয়ার ক্ষমতা নেই। অসম, অবাস্তব পরিস্থিতিতে বন্ধুত্ব হয় না। স্মর্তব্য, ইস্টইন্ডিয়া কোম্পানির বন্ধু হওয়ার জন্যও প্রতিযোগিতা ছিল অখণ্ড ভারতে। সময় পাল্টেছে, পাল্টায়নি বিভীষণদের চেহারা।
বন্ধু ছাড়া জীবন চলে এবং নির্বাচন থেকে বন্ধুত্বকে আলাদা করাই এখন সবচেয়ে বড় অগ্নিপরীক্ষা। এই পরীক্ষাতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে জিততেই হবে। অন্যথায় লুপ্ত হয়ে যেতে পারে সব মৌলিক অধিকার। আওয়ামী লীগের অতীত ইতিহাস থেকে এই শিক্ষা নেয়া যায়, চতুর্থ এবং ১৫তম সংশোধনী একসূত্রে গাঁথা। এই আমিত্ববাদ এবং সর্বগ্রাসী ক্ষমতায়নের বিরুদ্ধেই ১৬তম সংশোধনীর রায়!
অগ্নিপরীক্ষায় ব্যর্থ হলে, খালেদা জিয়াকে চূড়ান্ত গন্তব্যস্থলে পাঠিয়ে, তারেককে আজীবন নির্বাসিত রেখে, নিরঙ্কুশ রাজত্ব কায়েমে একচুল ছাড় দেবে না হাইকমান্ড- যা তাদের বক্তব্যে পরিষ্কার। কথার ফাইন প্রিন্টগুলো অতি দ্রুত বুঝতে হবে।
ইমেইল : [email protected]
ওয়েবসাইট : www.minafarah.com

 

লেখকের অন্যান্য কলাম